Skip to main content

যেভাবে এক ‘মিরাকল’ শিশুর জন্ম

স্ত্রীর কাটা পেট নিয়ে যখন ঢাকায় রওনা দিলাম, তখন মনে হয়েছিল বাচ্চাকে তো পাবোই না, বোধহয় বাচ্চার মাকেও হারাতে হবে। বাড়ির পাশের ডাক্তাররা (স্থানীয় চিকিৎসকরা) বলেছিলেন, বাচ্চার মায়ের গর্ভফুল নিচে এবং বাচ্চাও উল্টাভাবে রয়েছে। শুধু মানসিক শান্তির জন্য স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় রওনা দেই। কিন্তু আজ আমার সন্তান এবং সন্তানের মা দুজনই সুস্থ রয়েছে।’ বাংলা ট্রিবিউনকে কথাগুলো বলছিলেন মাদারীপুর থেকে আসা আকাশ হালদার, যার সন্তান মায়ের জরায়ুর বাইরে বেড়ে উঠে জন্ম নিয়েছে। এমন ‘মিরাকল’ শিশুকে নিয়ে আলোড়িত দেশের চিকিৎসা মহল


প্রসঙ্গত, গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম হয় মায়ের পেটের ভেতরে অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সিতে বেড়ে ওঠা এক শিশুর। শিশুটির ওজন ২.৮ কেজি এবং সে স্বাভাবিকভাবে মায়ের বুকের দুধ পান করতে পারছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মা ও নবজাতক দুজনই ভালো আছে, সুস্থ আছে।
সোমবার আদ-দ্বীন হাসপাতালের নির্ধারিত ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, মা দীপা রানী হালদার সন্তানকে কোলে নিয়ে বসে রয়েছেন, আর তাকে ঘিরে আছেন স্বজনরা। ফুটফুটে কন্যা সন্তানকে দেখিয়ে দীপা রানী বলেন, ‘আমরা এতো কিছু বুঝতাম না, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার সন্তানকে সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে বাঁচিয়েছেন। চিকিৎসকরা আমাদের জন্য যা করেছেন, তাতে আমরা তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।’ তিনি জানালেন, এটা তার দ্বিতীয় সন্তান। তাদের বড় ছেলের বয়স পাঁচ বছর।
শিশুটির বাবা মোটর মেকানিক আকাশ হালদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দীপা গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে মাদারীপুরের একটি ক্লিনিকে নিয়মিত চেকআপ করাতো। সেখানে আল্টাসনোগ্রাম রিপোর্টে দেখা যায়, মায়ের গর্ভফুল নিচে এবং শিশুটি উল্টা দিকে অবস্থান করছে।’
গত ২৭ জানুয়ারি মাদারীপুরের ঐ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় দীপা রানীকে। কিন্তু শিশুটি জরায়ুর বাইরে অবস্থান করছে দেখে অস্ত্রোপচার অসমাপ্ত রেখে শুধু পেটের কাটা অংশ সেলাই করে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেদিনই ঢাকায় এসে আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসপাতালটির গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা বেগমের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের চিকিৎসক দল প্রায় ২ ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচার শেষে নিরাপদে প্রসব করায় শিশুটিকে।
ঘটনাটিকে দেশের চিকিৎসার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় বলে মনে করছেন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা। ডা. গুলশান আরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জরায়ুর বাইরে শিশুর বেড়ে ওঠার ঘটনা অস্বাভাবিক নয়, তবে সেটা হাজারে একটি হতে পারে। এভাবে মায়ের পেটে থাকা বাচ্চা বড় জোর ২০ সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে। তবে দীপা হালদারের সন্তান পূর্ণ সময়ই (৩৯ সপ্তাহ) জরায়ুর বাইরে ছিল। এটা বিরল ঘটনা, এসব ক্ষেত্রে মা ও সন্তান দুজনেরই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘৮ থেকে ১০ হাজার গর্ভবতী মায়ের মধ্যে একটি অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি হতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হয় এবং মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।’
ঘটনাটিকে বাংলাদেশে প্রথম উল্লেখ করে আদ-দ্বীন হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ ধরনের সমস্যা নিয়ে এক নারী ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তার সন্তানকে বাঁচানো যায়নি। আমার জানা মতে, এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম আর অপারেশনও সম্পন্ন হয়েছে অত্যন্ত সফলভাবে।’
‘মিরাকল’ শিশুটির বাবা আকাশ হালদার জানান, আগামী বুধবার তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Comments

Popular posts from this blog

আল হাসসা শহরের অলৌকিক পাথর

আল হাসসা, ২৬ এপ্রিল- শূন্যে ভাসে এমন পাথরের ছবি বা ভিডিও আমরা অনেকে দেখেছি। যার মধ্যে কিছু কিছু ছবি দেখেছি এডিট করা। সত্য-মিথ্যা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। তবে লোকমুখে শোনা যায়, সৌদি আরবের আল হাসসা শহরের লাইলি-মজনুর পাহাড় বলে পরিচিত স্থানে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় দু’টি পাথর। এটি এমন পাথর যা কি না শূন্যে ভাসে- মাটি থেকে সামান্য উপরে। তবে এ পাথরের সত্যতা জানতে গিয়ে নানাজনের কাছে নানারকম তথ্য পাওয়া যায়। কারো কারো মতে, একজন মুজাহিদকে নিষ্ঠুরভাবে ওই পাথরের উপর গুলি করে মেরে ফেলা হয়। আর সেই ঘটনাটি ছিল এপ্রিল মাসের দিকে। আর তারপরই প্রতিবছর এপ্রিল মাসের নির্দিষ্ট দিনে পাথরটি আধাঘণ্টা মাটির উপর ভাসমান অবস্থায় থাকে। এর চেয়েও অবাক করা বিষয় হলো, যখন পাথরটি শূন্যে ভেসে ওঠে; তখন পাথরটির গায়ে লেগে থাকা রক্ত তাজা দেখায়। এমনকী তা উজ্জ্বল হয়ে গাঢ় বর্ণ ধারণ করে থাকে। পাথরে লেগে থাকা এই রক্ত স্থানীয়রা অনেকবার মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে আবারও পাথরের গায়ে রক্ত দেখা যায়। (তবে আমি তেমন কোনো রক্ত দেখিনি) অন্যরা বলেন, ৬২১ খ্রিষ্টাব্দের এক ...

সেহরির মেন্যুতে শিশা, ইফতারির পরই শিশার ধোঁয়াই অন্ধকার রেস্টুরেন্ট!

রাত সাড়ে ৮টা, বনানীর ২৭ নম্বর সড়কের কে ব্লকের ৯নং ভবনের ‘আত্তিন’ নামের একটি এরাবিয়ান রেস্টুরেন্টে। ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল নিচতলার কক্ষগুলো ধোঁয়ায় অন্ধকার। ১৮-৩০ বছর বয়সী নারী পুরুষরা আয়েশিভাবে পায়ে পা তুলে আওয়াজ করে পান করছেন শিশা। কেউ দেখলে বিশ্বাসই করবেন না কিছুক্ষণ আগেই এখানে শেষ হয়েছে প্রথম রোজার ইফতারের আয়োজন। ইফতার শেষে খাবারের ডিশগুলো তখনো পুরোপুরি সরিয়ে ফেলতে পারেননি রেস্টুরেন্টটির কর্মীরা। এরই মধ্য বেশ কয়েকজন দেশি-বিদেশি তরুণ-তরুণী টেবিলে সিগারেটের প্যাকেট ও জুস রেখে বসে গেছেন শিশার আসরে। এরাবিয়ান এই রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকতেই এগিয়ে আসেন আনিসুর রহমান নামের এক কর্মী। তার কাছে সেহরির মেন্যু চাইলে তিনি জানান, ‘স্যার, মেন্যু নেই, শেষ হয়ে গেছে।’ তবে তিনি বলেন, ‘সাধারণত আমাদের এখানে যেসব খাবার পাওয়া যায়, সেহরির সময় সেগুলোই মিলবে। তবে ১২০০ টাকার একটি মেন্যু আছে, তাতে শিশার সঙ্গে স্যান্ডউইচ ও সফটড্রিংকস পাওয়া যাবে।’ রমজানে সেহরির সময় শিশার মেন্যু কেন জানতে চাইলে আনিসুর বলেন, ‘আসলে সেহরির জন্য এই মেন্যু না। এখানে শিশা সব সময়ই পাওয়া যায়। যারা সেহরির সময় শিশা সেবনের জন...

১৫ মার্চ বাম মোর্চার জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও

ঢাকা: গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার প্রতিবাদে আহূত হরতালে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল, জলকামান ও গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা। এর মধ্যে ১৫ মার্চ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি রয়েছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা ও বাসদ-সিপিবির আহবানে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগরীতে ৬-১২টা হরতাল কর্মসূচি পালিত হয়। ভোর ৬টায় গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার হরতালের মিছিল প্রেসক্লাব, নয়াপল্টন, জিরো পয়েন্ট, দৈনিক বাংলা, হাইকোর্টের কদম ফোয়ারাসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে। সমাবেশের শুরুতেই আগামী কর্মসূচি ঘোষণা করেন মোর্চার সমন্বয়ক ফিরোজ আহমেদ। কর্মসূচির মাঝে রয়েছে ১-১৫ মার্চ বিক্ষোভ পক্ষ এবং ১৫ মার্চ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পর্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্...