Skip to main content

সেলিম ও শাহ আলমসহ ১০ জনকে যেকোন সময় জবাই ২০১৭ ফেব্রুয়ারি


রুদ্র মিজান : তুই আমারে বাঁচা ভাই। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। বলেছে, ৫০ লাখ টাকা পণ দিলে জান ফিরে পাবো। বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন সেলিম মিয়া। মোবাইল ফোনে শুধু কান্নার শব্দ। এ পাশে কাঁদতে থাকেন ভাই আরিফুলও। অনেক স্বপ্ন নিয়ে নানা প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে তার ভাই সেলিম মিয়া লিবিয়ায় যান। তার মুখ থেকে এরকম কথা শুনবেন তা কল্পনাও করেননি আরিফুল। শুধু শুনেছেন তা নয়। ইমোতে কল দিয়ে দেখানো হয়েছে দুঃসহ নির্যাতনের দৃশ্য। ছোট্ট একটি কক্ষে চোখ বেঁধে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। খাবার প্রায় বন্ধ। পানি পান করতে চাইলে প্রস্রাব করে পান করতে বলা হয়। জোর করে তা পান করানো হয়। এভাবেই দিনের পর দিন নির্যাতন করা হচ্ছে। সেলিম মিয়া ও শাহ আলমসহ একই কায়দায় অপহরণকারী চক্র বন্দি করেছে ১০ থেকে ১২ জনকে। সেলিম মিয়া ও শাহ আলম দুজনেই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এতো টাকা দেয়ার সাধ্য তাদের নেই। সেলিমের বাঁচার আকুতি, নির্যাতন, রক্তাক্ত মুখ দেখে সহ্য করতে পারেননি তার মা-বাবা। দুজনেই পুত্রের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা রফিকুল ইসলাম পাজরী স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দীর্ঘ চার বছর ধরে লিবিয়ায় আছেন সেলিম মিয়া ও শাহ আলম। আয়-রোজগার ভালোই করছিলেন। দরিদ্র পরিবারের ছেলে সেলিমের দিকে তাকিয়ে পুরো পরিবার। এরমধ্যেই ঘটে ঘটনাটি। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি বিকাল। প্রতিদিনের মতো কসমেটিকসের দোকানের কাজ শেষে বাসায় ফিরেন সেলিম ও শাহ আলম। বাসায় পৌঁছার কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজায় নক করে কেউ। বের হতেই তাদের জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর একটি ছোট্ট কক্ষে আটক রাখা হয়। শুরুতেই তাদের ফোন কেড়ে নেয়া হয়। বেদম মারধর করা হয় সেলিম ও শাহ আলমকে। তাদের দুজনের কাছে দাবি করা হয় এক কোটি টাকা। টাকা ছাড়া আর কোনো কথা নেই তাদের। ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে অপহরণের বিষয়টি জানতে পারেন সেলিম, শাহ আলমের স্বজনরা। ওই দিন রাতে সেলিম ফোনে কথা বলেন তার ভাই আরিফুলের সঙ্গে। বাঁচার আকুতি জানিয়ে সেলিম বলেন, ‘ভাইরে ওরা আমাকে ধরেছে। ৫০ লাখ টাকা না দিলে আমারে ছাড়বে না। তুই আমারে বাঁচারে ভাই। টাকা না দিলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ কি হয়েছে, কেন ধরেছে, ওরা কারা? এসব প্রশ্নের কোনো জবাব মেলেনি। তারপর লাইন কেটে যায়। এই সংবাদ জানার পর সংজ্ঞা হারান সেলিমের বাবা রফিকুল ইসলাম পাজরী ও মা সেলিনা বেগম। পুত্রকে যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে। কিন্তু পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার সাধ্য নেই যাদের তারা ৫০ লাখ টাকা কি করে দেবে। পরদিন দুপুরে আবার ইমোতে ভিডিও কলে কথা বলে সেলিম। তার মুখে রক্তের দাগ। রক্ত ঝরছে মুখ থেকে। সেলিমের অভিন্ন একই আকুতি ‘ভাইরে তুই আমারে বাঁচা। জহির ভাই যেভাবে বলে সেভাবে টাকা দিবি।’ তারপরই ফোনে কথা বলে জহির। তার কণ্ঠে ভয়ঙ্কর কথা ‘৫০ লাখ টাকা দিলে তোর ভাইকে ছাড়বো। নতুবা জবাই করে ফেলবো।’ আরিফুলের কণ্ঠে শঙ্কা ‘এতো টাকা কি করে দেবো ভাই। আমরা অনেক গরিব মানুষ। ভিটেবাড়ি ছাড়া কিচ্ছু নাই।’ কিন্তু এসব কথা শুনতে রাজি না অপহরণকারী চক্রের অন্যতম হোতা জহির। এক পর্যায়ে পরিবারের আর্থিক বর্ণনা শুনে ৫০ লাখ টাকা থেকে ১৬ লাখ টাকা দাবি করে। তাতেও অপারগতা প্রকাশ করেন সেলিমের ভাই আরিফুল। বলেন, ‘বিশ্বাস করেন ভাই, আমাদের তৌফিক নাই। বাবা বর্গা চাষি। নিজের জমিও নাই। সেলিম ভাইয়ের আয়ে আমাদের পুরো পরিবার চলে। আপনারা আমার ভাইকে ছেড়ে দেন।’ জহির ক্ষেপে যায়। ভিডিও কলের মধ্যেই লোহার রড দিয়ে বেদম পেটাতে থাকে। সেলিমের কান্না তখন লিবিয়া থেকে তার পৈতৃক নিবাসে পদ্মার ওপারে ছড়িয়ে যায়। বুক ফেটে যায় স্বজনদের। চোখের সামনে তারা দেখতে পান তাদের সেলিমকে অপহরণকারীরা পেটাচ্ছে। ইলেকট্রিকের শক দেয়া হয়। আরিফুল মিনতি করেন ‘জহির ভাই। আপনার পায়ে ধরি। আমার ভাইকে মারবেন না। আমাদের সব সম্পদ বিক্রি করে সব টাকা আপনাকে দিয়ে দেব। আপনি আমার ভাইকে ছেড়ে দেন।’ জহির জানতে চায় কত টাকা দিতে পারবে। আরিফুল জানায়, বাড়ি বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা দিতে পারবে। এছাড়া তাদের কোনো সম্পদ নেই। শেষ পর্যন্ত জহিরের দাবি পাঁচ লাখ টাকা। এই টাকা দিলেই সেলিমকে ছাড়বে। অতঃপর বসতবাড়ি বন্ধক রেখে এক লাখ, স্থানীয় একটি সমিতি থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নেন। সেইসঙ্গে নিজেদের ও আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার করে টাকা সংগ্রহ করে মোট পাঁচ লাখ টাকা দেন জহিরকে। টাকা দেয়া প্রসঙ্গে আরিফুল জানান, জহিরের দেয়া বিকাশ নম্বরে ১ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া জহিরের কথামতো, ১২ই ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার এক নারীর সোনালী ব্যাংকের হিসাব নম্বরে দুই লাখ এবং চুয়াডাঙ্গার ব্র্যাক ব্যাংকের এক যুবকের হিসাব নম্বরে দুই লাখ টাকা পাঠান সেলিমের স্বজনরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গার ওই নারীর নাম সাজেদা বেগম। তিনি আলফাডাঙ্গাতেই বাস করেন। অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গার ওই যুবকের নাম লাবলু শাহ।  

Popular posts from this blog

ফরেইনারদের ব্যাপারে হোম আফেয়ার্স থেকে আদেশ

ফরেইনারদের ব্যাপারে হোম আফেয়ার্স থেকে আদেশ জারী হয়েছে। দোকানে দোকানে তল্লাশী হবে। কাগজ ছাড়া পেলেই ধরে ফেলবে। কারো দোকান, অফিস আদালতে কাগজ ছাড়া লোক পেলে কোনো অজুহাত শোনা হবেনা, দোকানদারকে বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে গ্রেফতার করা হবে।

মধ্যরাতে কণ্ঠশিল্পী আসিফ গ্রেপ্তার

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। রাত দুইটার দিকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন আরেক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শফিক তুহিন। তার করা একটি মামলাতেই গ্রেপ্তার হন আসিফ। জানা যায়, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী শফিক তুহিনের দায়ের করা তেজগাঁও থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। এ বিষয়ে শফিক তুহিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি আগামিকাল(বুধবার) কথা বলবেন বলে জানান। এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মোল্যা নজরুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী শফিক তুহিনের দায়ের করা তেজগাঁও থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছেে। মামলায় আসিফ আকবর ছাড়াও আরও ৪/৫ জন অজ্ঞাত আসামির নাম রয়েছে। আসিফকে শিগগির আদালতে সোপর্দ করা হবে।

দ‌ক্ষিণ আ‌ফ্রিকায় অ‌ভিবা‌সী বি‌রোধী সমা‌বেশ

নুৃরুল আলম, দক্ষিণ আফ্রিকা: দ‌ক্ষিণ আ‌ফ্রিকায় অ‌ভিবাসী বি‌রোধী সমা‌বে‌শের ডাক দি‌য়ে‌ছে প্রি‌টো‌রিয়ার ‘মা‌মে‌লো‌ডি স‌চেতন নাগ‌রিক’। অ‌বৈধ অ‌ভিবাসী‌দের দেশ‌ থে‌কে বের ক‌রে দেয়ার দা‌বি‌তে আগা‌মি ২৪ ফেব্রুয়া‌রি শুক্রবার এ সমা‌বে‌শের ডাক দি‌য়ে‌ছে সংগঠন‌টি। স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় সি‌টি হ‌লে সমা‌বেশ‌টি হ‌বে। সমাবেশে স্থানীয় আফ্রিকানদের অংশগ্রহণ বাড়াতে গত  একমাস ধরে তারা লিফলেট বিতরণ ও বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে। ওই লিফলেটে বলা হয়েছে, এই সমাবেশ হচ্ছে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে এবং ওই সকল কোম্পানী ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যারা জিম্বাবুয়েসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের চাকরীর ব্যবস্থা করেছে। যেখানে চাকরী করার কথা ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকানদের। ওই লিফলেটে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন ক্যাশ এন্ড ক্যারি,  নানদোস, কেএফসি, স্পার, শপরাইটসহ বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে জিম্বাবুয়েসহ  (পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া) বিভিন্ন দেশের নাগরিক। স্থানীয়রা মনে করে, বিদেশী নাগরিকরা তাদের চাকরী কেড়ে নিয়েছে। ফলে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তারা প্রশ্ন তুলেছে,  নাইজেরিয়া, জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তানসহ আরো বিভিন্...