নুৃরুল আলম, দক্ষিণ আফ্রিকা:
দক্ষিণ আফ্রিকায় অভিবাসী বিরোধী সমাবেশের ডাক দিয়েছে প্রিটোরিয়ার ‘মামেলোডি সচেতন নাগরিক’। অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেয়ার দাবিতে আগামি ২৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার এ সমাবেশের ডাক দিয়েছে সংগঠনটি। স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় সিটি হলে সমাবেশটি হবে।
সমাবেশে স্থানীয় আফ্রিকানদের অংশগ্রহণ বাড়াতে গত একমাস ধরে তারা লিফলেট বিতরণ ও বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে। ওই লিফলেটে বলা হয়েছে, এই সমাবেশ হচ্ছে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে এবং ওই সকল কোম্পানী ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যারা জিম্বাবুয়েসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের চাকরীর ব্যবস্থা করেছে। যেখানে চাকরী করার কথা ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকানদের।
ওই লিফলেটে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন ক্যাশ এন্ড ক্যারি, নানদোস, কেএফসি, স্পার, শপরাইটসহ বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে জিম্বাবুয়েসহ (পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া) বিভিন্ন দেশের নাগরিক।
স্থানীয়রা মনে করে, বিদেশী নাগরিকরা তাদের চাকরী কেড়ে নিয়েছে। ফলে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তারা প্রশ্ন তুলেছে, নাইজেরিয়া, জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তানসহ আরো বিভিন্ন দেশের দেশের লোকদের এ্যাসাইলাম দিচ্ছে? তাদের দেশে কি যুদ্ধ হচ্ছে? সুতরাং তাদের এই আন্দোলন রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাইজেরিয়ানরা দেশটিতে মাদক ব্যবসার মাধ্যমে তাদের উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। পাশাপাশি তাদের মেয়েদের পতিতা ব্যবসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। যা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য হুমকি। তারা মনে করে, বিদেশীরা তাদের দেশের কোন উপকারে আসছেনা। বরং দেশের ক্ষতি করে চলেছে। তাই বিদেশী নাগরিকদের দেশ ছাড়া করতে তাদের এই সমাবেশ। সমাবেশ থেকে মিছিল নিয়ে তারা রাস্তায় আন্দোলন করবে বলেও জানা গেছে।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে, বিশেষ করে প্রিটোরিয়ায় অবস্থানরত সকল বাংলাদেশীকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রবীন প্রবাসীরা। দোকানের মালপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলেছেন তারা। প্রবীণ প্রবাসীরা মনে করেন, সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা ভাংচুর লুটপাটসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ কর্ম ঘটাতে পারে।
এই সমাবেশকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে প্রিটোরিয়াতে বেশকিছু নাইজেরিয়ান ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এবং বাসাবাড়িতে হামলা ও অগ্নি-সংযোগ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১ জন নাইজেরিয়ান নাগরিককে খুনসহ বেশ কয়েকজনকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে।
১৯৯৪ সালে দেশটিতে শেতাঙ্গ বর্ণবাদী শাসনের অবসানের পর থেকে আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশ থেকে লাখ লাখ লোক কাজের খোঁজে সেখানে পাড়ি জমায়। স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের সঙ্গে ক্রমেই ভাগ্যান্বেষণে আসা অভিবাসীদের কর্মক্ষেত্রের প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ বিদেশিরা এসে তাদের কাজ নিয়ে নিচ্ছে। এ মুহুর্তে দক্ষিণ আফ্রিকায় বেকারত্বের হার ৩০ শতাংশেরও নিচে।
এর আগে ২০০৮ সালে দেশটিতে বিদেশিদের ওপর হামলায় অন্তত ৬২ জনের মুত্যু হয়েছিল। ২০১৫ সালে জোহানেসবার্গে স্থানীয়দের হামলায় অভিবাসীদের দোকান-পাট লুট থেকে শুরু করে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এই হামলায় দেশটির ‘জুলু’ সম্প্রদায়ের রাজা বা গোষ্ঠী প্রধানকে স্থানীয়দের বিদেশিদের বিরুদ্ধে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ তোলা উঠেছে অনেক আগেই। যদিও তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
এর আগে ‘জুলু’ রাজার বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করা হবে দক্ষিণ আফ্রিকার মানবাধিকার কমিশনের বরাত দিয়ে বিবিসি এক প্রতিবেদনে উল্ল্যেখ করেছিল।
তথ্যসূত্র : ভয়েজ বাংলা
