Skip to main content

মুসা বিন শমসেরের জন্য আইন আলাদা!


১৯৭১ সালে যারা ফরিদপুরে ছিলেন,তারা মুসা বিন শমসেরকে চেনেন হত্যা ষড়যন্ত্র আর নির্যাতনের অনন্য উদাহরণ হিসেবে। মুসা বিন শমসেরের যুদ্ধকালীন অপরাধের সাক্ষ্য প্রমাণ থাকার পরও তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে তার অপরাধ তদন্ত না করায়, বিভিন্ন সময়ে মুসার অপরাধের শিকার ও প্রত্যক্ষসাক্ষীরা বলছেন, তার অপরাধের কথা মানুষ ৪৫ বছর ধরেই বলছে। তারপরও নতুন করে কোনও নাগরিক অভিযোগ না করলে মুসা নির্দোষ হয়ে যাবে? তদন্ত সংস্থা কি পারে না নিজেদের উদ্যোগে বিচারের উদ্যোগ নিতে?
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ‘অনুসন্ধান’ করছেন, তবে তা কেস ফাইলে ওঠে নাই। যদি কোনও সংশ্লিষ্টতা পান তবে তা নথিভুক্ত করে তদন্ত করা হবে। কবে নাগাদ এ ‘অনুসন্ধান’ শুরু হয়েছে আর কবে শেষ হবে, সেবিষয়ে তারা কিছু বলতে চাননি।
মুসার বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝাঁপি খুলে বসলেও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ও  প্রত্যক্ষদর্শীরা অতীত অভিজ্ঞতার কারণে নাম প্রকাশ করতে ইচ্ছুক না। তারা বলছেন, আমরা অভিযোগ করার পর তাকে গ্রেফতার ও বিচার না করা হলে এই এলাকায় আমরা টিকতে পারবো না।
অভিযোগ আছে, ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ফরিদপুরে ঢোকার ব্যাপারে মানচিত্র ও পথনির্দেশনা দিয়ে নেপথ্যে সহযোগিতা করেছেন এই মুসা। প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধারা পরদিন ২২ এপ্রিল ফরিদপুর সার্কিট হাউসে মেজর আকরাম কোরায়শী ও মুসা বিন শমসেরকে অন্তরঙ্গ পরিবেশে আলাপরত দেখতে পান। পুরো মুক্তিযুদ্ধকালেই মুসার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনার সাক্ষী ফরিদপুরবাসী। দেশ স্বাধীন হবার পর ডিসেম্বরেই মুসা ফরিদপুর ত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষ সাক্ষী থাকার পরও মুসার যুদ্ধকালীন অপরাধের অনুসন্ধানের কথা এখন জানাচ্ছে তদন্তসংস্থা। তা কবে তদন্তে রূপ পাবে,সে নিয়ে কোনও অবস্থান নেই তদন্ত কর্মকর্তাদের। সংস্থার সহ-সমন্বয়ক সানাউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তার বিরুদ্ধে ‘অনুসন্ধান’ করছি, তদন্ত নয়।’ এটি অফিসিয়াল না আনঅফিসিয়াল সে প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কোনও আনঅফিসিয়াল কাজ করি না, সবকিছুই অফিসিয়াল। তার ‍বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলেই আমরা বিষয়টি আরও সক্রিয়ভাবে দেখব।’ তদন্ত সংস্থা কবে এই ‘অনুসন্ধান’ শুরু করেছে, এ  প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে।’ কবে নাগাদ শেষ হবে প্রশ্নে সানাউল হকের উত্তর, ‘আমরা কোনও বিষয়ে আন্দাজ করে  মন্তব্য বলতে চাই না। ’    
এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার ও ফাঁসি কার্যকর হওয়া শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলার সাক্ষীরা তদন্ত কর্মকর্তাদের সামনে সাক্ষ্য দিতে এসে মুসা বিন শমসেরের কথা উল্লেখ করেছেন। তাদের প্রশ্ন,একাত্তরে মুসার ভূমিকা এবং প্রমাণাদি থাকলেও এখনও কেন ‘অনুসন্ধান’ পর্যায়ে থাকতে হচ্ছে।
এই সাক্ষীদের মন্তব্য বিষয়ে সানাউল হক কোনও মন্তব্য করতে চান না জানিয়ে বলেন, ‘তারা নিজেদের জায়গা থেকে সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তুত থাকলেও আমাদের একটা প্রক্রিয়া আছে। তারা আমাদেরই সাক্ষী, তাদের বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’
এদিকে মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে ‘অনুসন্ধানের’ সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘মুসা বিন শমসেরকে গ্রেফতার না করে তার বিরুদ্ধে তদন্ত অনুসন্ধান যা-ই বলি না কেন, সেটা করতে পারা সম্ভব না। তার পারিবারিক যে রাজনৈতিক পরিচিতি, তার ওপর তার দাপটের কারণে কেউ  কিছু জানাবে না।’
তিনি আরও বলেন,‘কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, অনুসন্ধান শেষ হলে তদন্ত শুরু হবে,এসবই আসলে মুসাকে বাঁচিয়ে দেওয়ার কৌশল কিনা সেটাও প্রশ্ন। ’
মুসার বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষী বা ভিকটিমকেই অভিযোগ করতে হবে কিনা, প্রশ্নে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রসিকিউটর বলেন, এধরনের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। অভিযোগকারী তদন্ত সংস্থা থেকেও হতে পারে। তারা অনুসন্ধান করে যদি মনে করেন তা মামলাভুক্ত করতে হবে, তাহলে করবেন। এতে কোনও বাধা নেই।

Comments

Popular posts from this blog

আল হাসসা শহরের অলৌকিক পাথর

আল হাসসা, ২৬ এপ্রিল- শূন্যে ভাসে এমন পাথরের ছবি বা ভিডিও আমরা অনেকে দেখেছি। যার মধ্যে কিছু কিছু ছবি দেখেছি এডিট করা। সত্য-মিথ্যা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। তবে লোকমুখে শোনা যায়, সৌদি আরবের আল হাসসা শহরের লাইলি-মজনুর পাহাড় বলে পরিচিত স্থানে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় দু’টি পাথর। এটি এমন পাথর যা কি না শূন্যে ভাসে- মাটি থেকে সামান্য উপরে। তবে এ পাথরের সত্যতা জানতে গিয়ে নানাজনের কাছে নানারকম তথ্য পাওয়া যায়। কারো কারো মতে, একজন মুজাহিদকে নিষ্ঠুরভাবে ওই পাথরের উপর গুলি করে মেরে ফেলা হয়। আর সেই ঘটনাটি ছিল এপ্রিল মাসের দিকে। আর তারপরই প্রতিবছর এপ্রিল মাসের নির্দিষ্ট দিনে পাথরটি আধাঘণ্টা মাটির উপর ভাসমান অবস্থায় থাকে। এর চেয়েও অবাক করা বিষয় হলো, যখন পাথরটি শূন্যে ভেসে ওঠে; তখন পাথরটির গায়ে লেগে থাকা রক্ত তাজা দেখায়। এমনকী তা উজ্জ্বল হয়ে গাঢ় বর্ণ ধারণ করে থাকে। পাথরে লেগে থাকা এই রক্ত স্থানীয়রা অনেকবার মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে আবারও পাথরের গায়ে রক্ত দেখা যায়। (তবে আমি তেমন কোনো রক্ত দেখিনি) অন্যরা বলেন, ৬২১ খ্রিষ্টাব্দের এক ...

সেহরির মেন্যুতে শিশা, ইফতারির পরই শিশার ধোঁয়াই অন্ধকার রেস্টুরেন্ট!

রাত সাড়ে ৮টা, বনানীর ২৭ নম্বর সড়কের কে ব্লকের ৯নং ভবনের ‘আত্তিন’ নামের একটি এরাবিয়ান রেস্টুরেন্টে। ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল নিচতলার কক্ষগুলো ধোঁয়ায় অন্ধকার। ১৮-৩০ বছর বয়সী নারী পুরুষরা আয়েশিভাবে পায়ে পা তুলে আওয়াজ করে পান করছেন শিশা। কেউ দেখলে বিশ্বাসই করবেন না কিছুক্ষণ আগেই এখানে শেষ হয়েছে প্রথম রোজার ইফতারের আয়োজন। ইফতার শেষে খাবারের ডিশগুলো তখনো পুরোপুরি সরিয়ে ফেলতে পারেননি রেস্টুরেন্টটির কর্মীরা। এরই মধ্য বেশ কয়েকজন দেশি-বিদেশি তরুণ-তরুণী টেবিলে সিগারেটের প্যাকেট ও জুস রেখে বসে গেছেন শিশার আসরে। এরাবিয়ান এই রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকতেই এগিয়ে আসেন আনিসুর রহমান নামের এক কর্মী। তার কাছে সেহরির মেন্যু চাইলে তিনি জানান, ‘স্যার, মেন্যু নেই, শেষ হয়ে গেছে।’ তবে তিনি বলেন, ‘সাধারণত আমাদের এখানে যেসব খাবার পাওয়া যায়, সেহরির সময় সেগুলোই মিলবে। তবে ১২০০ টাকার একটি মেন্যু আছে, তাতে শিশার সঙ্গে স্যান্ডউইচ ও সফটড্রিংকস পাওয়া যাবে।’ রমজানে সেহরির সময় শিশার মেন্যু কেন জানতে চাইলে আনিসুর বলেন, ‘আসলে সেহরির জন্য এই মেন্যু না। এখানে শিশা সব সময়ই পাওয়া যায়। যারা সেহরির সময় শিশা সেবনের জন...

১৫ মার্চ বাম মোর্চার জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও

ঢাকা: গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার প্রতিবাদে আহূত হরতালে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল, জলকামান ও গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা। এর মধ্যে ১৫ মার্চ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি রয়েছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা ও বাসদ-সিপিবির আহবানে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগরীতে ৬-১২টা হরতাল কর্মসূচি পালিত হয়। ভোর ৬টায় গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার হরতালের মিছিল প্রেসক্লাব, নয়াপল্টন, জিরো পয়েন্ট, দৈনিক বাংলা, হাইকোর্টের কদম ফোয়ারাসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে। সমাবেশের শুরুতেই আগামী কর্মসূচি ঘোষণা করেন মোর্চার সমন্বয়ক ফিরোজ আহমেদ। কর্মসূচির মাঝে রয়েছে ১-১৫ মার্চ বিক্ষোভ পক্ষ এবং ১৫ মার্চ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পর্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্...