ভিসা ছাড়াই দুই হজযাত্রী গত ২৭ জুলাই সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দরে পৌঁছে যান। জেদ্দা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রায় ১৬ ঘণ্টা বিমানবন্দরে বসিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে সৌদি কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ভিসার ব্যবস্থা করে তাদের টার্মিনাল ছাড়তে হয়েছে।
এনিয়ে জেদ্দা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের সমালোচনা করে।এতে করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সেখানকার বাংলাদেশ হজ অফিস।
এদিকে ভিসা ছাড়াই দুই হজযাত্রী কিভাবে ইমিগ্রেশন পার হয়ে বিমানে করে জেদ্দায় পৌঁছলেন, তা খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে ধর্মমন্ত্রণালয়।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল জলিল বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানান।
এবিষয়ে গত ২৭ জুলাই জেদ্দা থেকে হজ অফিসার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন একটি চিঠি পাঠিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ২৭ জুলাই শাবান এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর ১৪৫৭) এর হজযাত্রী নাসিমা আক্তার পিআইডি নম্বর ১৪৫৭০৭২, এসভি-৮০৫ ফ্লাইটে জেদ্দার হজ টার্মিনালে অবতরণ করেন। সৌদি ইমিগ্রেশন পুলিশ দেখতে পায় যে, তিনি ভিসা ছাড়াই সৌদি আরবে হজের জন্য এসেছেন। এছাড়া আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নম্বর ০১৮৪) এর মালিকও হজ ভিসা ছাড়া সৌদি আরবে আসেন। ভিসা ছাড়া তাদের দু’জনকে প্রায় ১৬ ঘণ্টা হজ টার্মিনালে অপেক্ষা করতে হয়। শেষ পর্যন্ত সৌদি কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ভিসা পেয়ে টার্মিনাল ত্যাগ করেন তারা।’
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে,‘ভিসা ছাড়া এই দু’জন হজযাত্রী কিভাবে বিমানে অরোহণ করতে পারলেন, এবিষয়ে জেদ্দা হজ টার্মিনালের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের সমালোচনা করে। বিষয়টি হজ অফিস জেদ্দার জন্য বিব্রতকর এবং বাংলাদেশের সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার পরিপন্থী।’
চিঠিতে অনুরোধ করা হয়,‘বাংলাদেশ থেকে আসা সকল হজযাত্রীর ভিসাসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট রয়েছে কিনা, তা ভালোভাবে চেক করার জন্য বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জরুরিভাবে অবহিত ও সতর্ক করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
এবিষয়ে আশকোনা হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘আমার এরকম কোনও কিছু জানা নেই। জানলে আপনাকে জানাতাম। আমরা কোনও কিছু গোপন করবো না।’
তবে বিষয়টি স্বীকার করেছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, ‘আমি একজন নারীর কথা শুনেছি। তার ভিসা ইস্যু হয়েছিল। কিন্তু পাসপোর্টের সঙ্গে ভিসা ছিল না। পাসপোর্টের সঙ্গে এখন ভিসা লাগিয়ে দেওয়া হয় না, আলাদা দেওয়া হয়। আমরাও বুঝতেছি না কী হয়েছে? কী হলো? তা জানা দরকার। এটা কি আমাদের ত্রুটি নাকি সৌদির, তা বুঝতেছি না। এরকম হওয়ার কথা না। তিনি কিভাবে আমাদের এয়ারপোর্ট পার হলেন, তাও খতিয়ে দেখা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে তার ভিসা প্রিন্ট করে তাকে নিয়েছে। তারপরও আমরা বিষয়টি যাছাই করে দেখবো। কিভাবে এটা ঘটলো।’
ধর্ম সচিব বলেন, ‘আমরা গত বছরের তুলনায় এবছর অনেক এগিয়ে আছি। হাজি পাঠানোর দিক থেকে ও ভিসা পাওয়ার দিক থেকে। এখন মাত্র ৯৩ হাজার হাজি বাকি রয়েছেন। যে সময় বাকি আছে, এই সময়ের মধ্যে যদি প্রতিদিন পাঁচ হাজার করে হাজি যান, তাতেও এক লাখ ২০ হাজার হাজি পাঠানো যাবে। কিন্তু আমাদের বাকি আছে মাত্র ৯৩ হাজার। উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। আমরা ধীরে ধীরে সবাইকে নিতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘একটা সমস্যা হয়েছে, ২৭ জুলাই থেকে রিপিটেড ১৫ হাজার হাজির (পুনরায় যারা হজ করতে যাচ্ছেন) বিষয়ে দুই হাজার সৌদি রিয়াল দাবি করা হয়েছে। এবিষয়ে সারা বিশ্বেই প্রতিবাদ হচ্ছে। সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ আগে এই দুই হাজার রিয়াল চায়নি। হঠাৎ করেই ২৭ জুলাই থেকে চাওয়া হয়েছে। আমরা সৌদির সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি।’
Comments
Post a Comment