জার্মানের রাজধানী বার্লিনে অবৈধ বসবাসরতদের বৈধ কাগজ করার জন্য কন্ট্রাক্ট বিয়ের নামে রমরমা ব্যবসা ফেঁদে বসেছে বাংলাদেশি একটি অসাধু দালালচক্র। এই চক্রের খপ্পড়ে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অসংখ্য নিরীহ প্রবাসী বাংলাদেশি। আর এর মাধ্যমে ওই চক্রটি লাখ লাখ ইউরো হাতিয়ে নিচ্ছে।
কন্ট্রাক্ট বিয়ের মাধ্যমে জার্মানিতে বৈধ হওয়ার রেয়াজ অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। তবে এর সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশের অসাধু লোকদের একটা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা মূলত কন্ট্রাক্ট বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে।
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া প্রবাসীদের স্থায়ী কাগজ করে দেয়ার নামে কন্ট্রাক্ট বিয়ের প্রলোভন দেখানো হয়। এরপর জনপ্রতি ১০-১২ হাজার ইউরো নেয়া হয়, কিন্তু কন্ট্রাক্ট বিয়ে আর হয় না। টাকাও ফেরত পাওয়া যায় না।
হানজাপ্লাটজে বসবাসকারী শ্যামল বাড়ৈ এমনই একজন ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, ‘আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দালাল শ্যামল বড়ুয়া স্থায়ী কাগজ করার জন্য কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের নামে ১২ হাজার ইউরো নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। চার মাস ধরে কাগজ না থাকায় কাজবিহীন মানবেতর জীবন যাপন করছি আমি।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, বার্লিন প্রবাসী চট্টগ্রামের রাউজানের শ্যামল বড়ুয়া, হোমনার মহিউদ্দীন মিলনসহ আরো কয়েকজন বাংলাদেশি কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের অবৈধ ব্যবসায় জড়িত। এই অসাধু চক্রের মূল হোতা আফ্রিকার ডেভিড, কেনেথ কাউন্ডা, পোল্যান্ডের মাচেক, ভারতের অজিত সুদেন সিং (শেরি) ও তার কথিত বান্ধবী মিনু মজুমদার। তারা জার্মানে ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের স্থায়ী কাগজের প্রলোভনে ফেলে জার্মান নাগরিক পূর্ব ইউরোপীয় নারীদের সঙ্গে বিয়ের বন্দোবস্ত করে। এ জন্য জনপ্রতি নগদ ১০-১৫ হাজার ইউরো নিয়ে থাকে।
জানা যায়, এ অর্থ থেকে দু-তিন হাজার ইউরো বিয়েতে চুক্তিবদ্ধ নারীকে দেয়া হয়। বিয়ের রেজিস্ট্রি ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ২ থেকে আড়াই হাজার ইউরো বাদ দিয়ে বাকি অর্থ দালালচক্র আত্মসাৎ করে।
অসলারস্ট্রাসে বসবাসরত মাদারীপুরের নূর হোসেনের সঙ্গে একজন স্লোভাকিয়ান নারীর বিয়ের নামে ১৫ হাজার ইউরো এ দালালচক্র হাতিয়ে নেয়।
ভুক্তভুগীরা অবৈধ হওয়ায় তারা এসব ঘটনায় পুলিশ কিংবা আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না। এমনকি বাংলাদেশি দালালদের বিরুদ্ধে দূতাবাসের সাহায্য নিতে পারছে না।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে দূতাবাসের চ্যান্সেরি প্রধান কাজী তুহিন রসুল বলেন, অনেকে বিষয়টি অবহিত করলেও দূতাবাস অবৈধদের কোনো সাহায্য করতে পারে না।
বার্লিনের বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা মনে করেন, কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ অবৈধদের বৈধ হওয়ার সহজ উপায়। দীর্ঘদিন ধরে গোপনে চলে আসা এ পদ্ধতিতে অসংখ্য বাংলাদেশি বিভিন্ন সময়ে স্থায়ীভাবে থাকার বৈধতা পেয়েছেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে একশ্রেণির অসাধু চক্রের খপ্পড়ে পড়ে ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ নিরীহ প্রবাসীরা হাজার হাজার ইউরো খুইয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তারা এ চক্র থেকে নতুনদের সাবধান থাকার পরামর্শ দেন।
Comments
Post a Comment