Skip to main content

কাউকে আঘাত করার জন্য আমার রাজনীতিতে আসা নয় : মাশরাফি


আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনের নৌকার কাণ্ডারি হতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
রোববার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তাকে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে।
আজ (রোববার) তার ফেসবুক পেজে রাজনীতি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মাশরাফি। তাতে তিনি লিখেন-
২০০১, ক্রিকেটের আঙিনায় পথচলা শুরু। আজ ২০১৮। এই প্রায় দেড় যুগে ক্রিকেট যা খেলেছি, জীবন দিয়ে খেলেছি। কখনও আপোস করিনি। আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত আপোস করতেও চাই না। বাকিটা মহান আল্লাহর ইচ্ছা।
রাজনীতির তাড়না আমার ভেতরে ছিলই। কারণ, সবসময় বিশ্বাস করেছি, রাজনীতি ছাড়া দেশের উন্নয়ন জোরালোভাবে সম্ভব নয়। ক্রিকেট খেলেছি, আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছি। না হলে হয়তোবা ২০১১ সালেই হারিয়ে যেতাম। এই মাশরাফিই হয়তো এতদিনে থাকতো না। ২০১১ সালে আপনাদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা আমাকে এই সাত বছর চলতে সহায়তা করেছে। এবার আমার সামনে সুযোগ এসেছে আমার দেশের মানুষের জন্য কিছু করার। বিশ্বকাপের পরের সাড়ে চার বছর আমার জন্য কী অপেক্ষায় আছে, সেটাও জানি না। তাই আমি সময়কে মূল্যায়ন করেছি। সময়ের ডাক শুনেছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি, সময়ের কাজ সময়েই করা উচিত।
বঙ্গবন্ধুকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি, কিন্তু তার কথা জেনে, উপলব্ধি করেই বেড়ে উঠেছি। পড়াশোনা করে, অনেকের কাছে শুনে যতটুকু জেনেছি, সেসব থেকেই উনাকে হৃদয়ে ধারণ করেছি। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পারিবারিকভাবেই আমার অস্থি-মজ্জায়, মননে-মগজে।
এখন বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যে উন্নয়ন কাজ করছেন, তার সারথি হয়ে আমার এলাকার জন্য কিছু করতে চাই। এটা যদি করতে না পারি, তাহলে আমার কাছে মনে হবে, আমার এলাকার প্রতি আমি মোটেও সুবিচার করছি না। বঞ্চিত করছি। ক্রিকেট খেলতে খেলতে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে যতটুকু সামাজিক কাজ করেছি; আমার মনে হয়েছে, সেটুকুই যথেষ্ট নয়। আরও বড় পরিসরে করার সুযোগ খুঁজেছি সবসময় এবং রাজনীতি আমাকে সেই সুযোগটা করে দিচ্ছে।
কোনো ব্যক্তি বা কোনো দলকে আঘাত করার জন্য আমি রাজনীতিতে আসছি না। যে যার আদর্শ নিয়ে সুন্দর জীবন-যাপন করবে, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধে সহনশীল ও সহযোগিতাপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিরাজ করবে, সেটিই আমার চাওয়া।
অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, আমাদের মতো মানুষ কেন রাজনীতিতে আসবে! সত্যি বলতে, আমি জানি না, আমি কেমন মানুষ। ভালো মানুষ হিসেবে আমার যে পরিচিতি ছড়িয়েছে, সেটাও আমার ভেতর বারবার প্রশ্ন জাগিয়েছে, কেন আমি ভালো মানুষ? দুটি বল করে, আপনাদের কয়েকটি আনন্দের মূহুর্ত উপহার দিয়ে, দু'জনকে জড়িয়ে ধরেই যদি ভালো মানুষ হওয়া যায়, তাহলে স্রেফ এরকম ভালো মানুষ হওয়ার ইচ্ছা আমার কখনোই ছিল না। সত্যিকার অর্থেই আমি কেমন মানুষ, আমার বিশ্বাস, সেটি বিচার করার সময় সামনে। যদি আমি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারি এবং আমার দল সরকার গঠন করে, তার পর আমার কর্মেই ফুটে উঠবে আমি কতটা ভালো মানুষ।
জানি, বলা যত সহজ, কাজ করে দেখানো তার চেয়ে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা নিতে আমি পিছপা হইনি। চাইলেই আমি নিজের সহজাত পরিবেশের ভেতর থাকতে পারতাম। কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখি, আমার এলাকার মানুষ সমৃদ্ধির পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাক। আলো ছড়িয়ে পড়ুক নড়াইলবাসীর উপর। আমি চাই সমৃদ্ধ নড়াইল। সেই পথে আমার যত কষ্টই হোক, আমি থাকবো আমার প্রিয় নড়াইলবাসীর পাশে।
মনোনয়নপত্র কেনার সপ্তাহখানেক আগে আমার মেয়েকে আমি ব্যাংককের সবচেয়ে বড় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেই সামর্থ্য আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। কিন্তু আমি ভেবেছি, ওই মানুষটির কথা, যে আরও অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েও প্রাপ্য চিকিৎসা পাচ্ছে না। আমি ভেবেছি সেই ছেলে-মেয়েদের কথা, যারা প্রতিভাবান হয়েও মফস্বল থেকে উচ্চশিক্ষার দুয়ার পর্যন্ত যেতে পারছে না। ভেবেছি খেটে খাওয়া সেই মানুষদের কথা, যারা দিন-রাত পরিশ্রম করেও প্রাপ্যটুকু অনেক সময় পাচ্ছে না।
আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সব সচেতন, যোগ্য ও ভালো মানুষের রাজনীতিতে আসা উচিত। অনেকেই হয়তো সাহস করে উঠতে পারেননা নানা কারণে, মানসিক সীমাবদ্ধতায়। আমার মনে হয়েছে, মানসিক বাধার সেই দেয়াল ভাঙা জরুরি। তাই ভেতরের তাগিদ পূরণের উদ্যোগটা আমিই নিলাম। ক্রিকেটের মাঠে দেড় যুগ ধরে তিলতিল করে গড়ে ওঠা মাশরাফির অবস্থান হয়তো আজ অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে রাজনীতির মাঠে নামার কারণে। কিন্তু আমি নিজে সত্যিকার অর্থেই রোমাঞ্চিত নতুন কিছুর সম্ভাবনায়। আমি আশা করি এমন কিছু করতে পারব, যা দেখে ভবিষ্যতে হাজারও মাশরাফি এগিয়ে আসবে ইনশাল্লাহ।
আমি আবারও বলছি, কোনো ব্যক্তি বা দলকে আঘাত করার ইচ্ছে আমার নেই। কেবল সময়ের দাবি মেটানোর চেষ্টা করছি মাত্র। আশা করি, আপনাদের ভালোবাসা আমাকে এই ইনিংসেও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনাদের সমর্থন ও দোয়ায় সিক্ত হতে চাই।

Comments

Popular posts from this blog

ফরেইনারদের ব্যাপারে হোম আফেয়ার্স থেকে আদেশ

ফরেইনারদের ব্যাপারে হোম আফেয়ার্স থেকে আদেশ জারী হয়েছে। দোকানে দোকানে তল্লাশী হবে। কাগজ ছাড়া পেলেই ধরে ফেলবে। কারো দোকান, অফিস আদালতে কাগজ ছাড়া লোক পেলে কোনো অজুহাত শোনা হবেনা, দোকানদারকে বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে গ্রেফতার করা হবে।

ভেলকমে ডাকাতের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

আজ সন্ধ্যা ৮টা বাজে সাউথ আফ্রিকার ফ্রি ষ্টেটের ভেলকমে ডাকাতের গুলিতে  শাকিল নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। জানা যায় শাকিল তখন দোকানের কাউন্টারে অবস্থান করছিলেন। সে সময় একদল ডাকাত হানা দেয় দোকানে। নিহত শাকিল শাকিল কাউন্টার থেকে সব টাকা দিয়ে দেয় ডাকাতদের কিন্তু টাকা দেওয়ার পরেও ডাকাত দল তাকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে শাকিল ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তিনি গত এক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে সাউথ আফ্রিকায় আসে। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী দাগনভূঞা।

প্রধানমন্ত্রীর নামে ফেসবুকে নকল ৭৫২ আইডি বন্ধ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে খোলা ৭৫২টি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টসহ মোট ১৩৩২টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। গত কয়েকদিনে এসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। এনটিএমসির দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গত বছরের ১৯ আগস্ট দৈনিক যোগফলের সম্পাদক আসাদুল্লাহ বাদল একটি পর্যবেক্ষণ মূলক প্রতিবেদন লিখে প্রকাশ করেছিলেন যোগফলে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেক নেতাকর্মীরাও এসব নকল আইডিতে দেওয়া পোস্ট শেয়ার করতেন। এনটিএমসি জানিয়েছে, একটি সংঘবদ্ধ কুচক্রী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন গুজব সৃষ্টি ও অপপ্রচারের মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং ব্যক্তিগত সুবিধা হাসিলের উদ্দেশে দুষ্কৃতিকারীরা বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সংস্থার নামে ভুয়া আইডি ও পেজ খুলে ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল। এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারবর্গের নামে ভুয়া আইডি/ পেজ খুলে মিথ্যা ও মানহানিকর প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেশ ও বিদেশে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্নের অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। ফেসবুকে গুজব ও অপপ্রচার রোধে ন্যাশনাল টেলিকমিউন...