Skip to main content

রবিউল রক্তশূন্য মুখে কাঁপতে কাঁপতে বলল, স্যার আমারে কি মাইরা ফেলবেন?

ক্রসফায়ার এবং একজন র‍্যাব কর্মকর্তার শেষ পরিণতি??

রবিউল রক্তশূন্য মুখে কাঁপতে কাঁপতে বলল, স্যার আমারে কি মাইরা ফেলবেন?

রবিউল যখন প্রশ্নটা করল তখন আমি সিগারেটে সর্বশেষ টান দিচ্ছি। প্রশ্ন শুনে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য থামলাম। তারপর আবার লম্বা করে টান দিয়ে ঠোঁট গোল করে উপর দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে সিগারেট মাটিতে ফেলে বুট দিয়ে ঘষে আগুন নেভালাম। রবিউলের জবাব না দিয়েই বললাম, ফারুক! ওর চোখ বাঁধো।




বিউল নামের মধ্যবয়সী লোকটা এবার চূড়ান্ত ভয় পেয়ে গেল। এতক্ষণ ধরে তার চোখে মুখে যে সামান্য আশা ছিল সেটা মুহুর্তের মধ্যেই হারিয়ে গেছে। তার কপাল থেকে নিয়ে থুতনী পর্যন্ত পুরো মুখমন্ডল একটা নির্দিষ্ট ছন্দে কাঁপছে। মৃত্যুভয়ে আচ্ছন্ন মানুষকে নতুন দেখছি না। এটাই আমার জীবনের প্রথম ক্রসফায়ার নয়। তারপরও কেন জানি প্রতিবারই দৃশ্যটাকে নতুন মনে হয়।

ফারুক চোখ বাঁধার কাপড় খুঁজতে গাড়িতে চলে গেল। আমি বিরক্ত হলাম। গাড়ি থেকে নামার সময়েই জিনিষটা পকেটে করে নিয়ে আসা উচিত ছিল। সবচেয়ে ভালো ছিল গাড়িতেই চোখ বেঁধে রেখে দিতে পারলে। এসব কাজে দেরি করার কোনো মানে নেই। ঝামেলা যত দ্রুত সরানো যায় ততই মঙ্গল।

“স্যার আমারে কি মাইরা ফেলবেন?”

রবিউল দ্বিতীয়বারের মতো এই প্রশ্ন করলে আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, এত কথা কেন রে বাপ? উত্তর কিছুক্ষণের মধ্যে এমনিতেই পেয়ে যাবা। এখন আল্লাহ খোদার নাম নাও।

রবিউল এবার পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গেল সে মারা যাচ্ছে। এক মুহুর্ত নিষ্প্রাণ চোখে তাকিয়ে তারপর অদ্ভূত এক কাজ করে ফেলল লোকটা। হাত হ্যান্ডকাফ বাঁধা অবস্থায় ঝপ করে কাঁটা ফলের মতো আমার পায়ের নিচে পড়ে হাউমাউ করে বলল, স্যার আমারে মাইরেন না। আমি নির্দোষ স্যার! ও স্যার গো! আপনার দোহাই গো!

কে দোষী আর কে নির্দোষ সেটা ঈশ্বরের পরেই যদি কেউ জানে তবে সেটা র্যাব- পুলিশ। এই লোকটা যে আপাতমস্তক ভালো মানুষ সেই খবর তার স্ত্রীর অজানা থাকলেও আমাদের অজানা নয়। ভালো মানুষদের নাকি আয়ু কম থাকে, সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। যুগে যুগে ভালো মানুষদের এই পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। কে পরাঘাতে মরে নি? সক্রেটিস? কোপার্নিকাস? বান্না? এমনকি যিশু খ্রিষ্টকেও এভাবেই মরতে হয়েছে। যুগের নিয়মই এমন। সভ্যতার রীতি এটাই। আমি নিয়ম পাল্টানোর কেউ নই।

রবিউলকে টেনে হিঁচড়ে মাটি থেকে তোলা হলো। তার গায়ে এই বিস্তীর্ণ মাঠের কিছু ধুলো লেগে গেল। লোকটার কাঁপুনি ক্রমশই বাড়ছে। আমার জানামতে আগামী কাল জোছনা। এই পরিষ্কার আকাশে আজকের রাতটাকেই জোছনা রাত বলে মনে হচ্ছে। চাঁদের আলোয় রবিউলের চোখের কিনার ঘেষে নেমে পড়া অশ্রুর ধারা চিকচিক করছে। বিরাট আকাশের নিচে রাতের এই নির্জনতায় রবিউলকে মনে হচ্ছে সামান্য কীঠ পতঙ্গ, যার জন্ম হচ্ছে কেবলই মৃত্যুর জন্য।





রবিউল আরেকবার ঝুঁকে পড়ার সুযোগ নিতে গিয়ে ব্যর্থ হলো। এবার পেছন থেকে দুইজন তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। পড়তে না পারলেও সে খানিকটা চিৎকার করে সেই একই কথা বলল, স্যার আমারে মাইরেন না স্যার। আমি নির্দোষ স্যার। আমার দুইটা মেয়ে আছে স্যার। তাদের দেখার কেউ নাই স্যার। আমার বউ খুব অসুস্থ স্যার।

আমি উল্টো ঘুরে পকেট থেকে সিগারেট বের করলাম। চারপাশে বাতাস, লাইটারে আগুন ধরাতে একটু সমস্যা হচ্ছে। কাজটাতে নতুন না আমি, তারপরও প্রতিবারই একটু হলে অস্বস্তি লাগে। সিগারেট তখন খুব কাজে দেয়। নিকোটিন রক্ত থেকে অনেকটাই উদ্বেগ কমিয়ে দেয়। যদিও এখানে উদ্বেগের মতো কিছুই নেই। লোকটা আহামরি কেউ না। ছোটখাটো ব্যবসায়ী। সরকারদলীয় এক নেতার টেন্ডারবাজীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এলাকায় হিরো হয়ে গেছে। স্থানীয় জনতার সহায়তায় নেতার ছেলেকে ধর্ষণ চেষ্টারত অবস্থায় ধরে গণধোলাইয়ের ব্যবস্থা করিয়েছে। তারপর নেতা পুত্রকে গ্রেফতারের জন্য করেছে থানা অবরোধ। লোকটার ভালো পজিশনে বেশ কিছু জমি আছে। নেতা ভদ্রলোক সেই জমি হজম করতে চাইছেন। বাংলাদেশের বাস্তব আইনে মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ দায় রবিউল জমা করে রেখেছে।

দুই মিনিট হয়ে গেছে। ফারুক আসতে এত দেরি করছে কেন? গুলি করেই কাজ শেষ না। আরো যন্ত্রযোগাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে। হাত না চালিয়ে কাজ করলে কীভাবে হয়?

রবিউল ঘুরে ফিরে একই আর্তনাদ করেই যাচ্ছে। মুখে বেঁধে রাখলে ভালো হতো। সেটার অবশ্য খুব বেশি দরকার নেই। এই চিৎকার সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কারো কানে পৌঁছাবে না, অবশ্য সৃষ্টিকর্তা যদি শুনতে ইচ্ছুক হোন তবেই। রবিউলের ভেতরেও বোধহয় একই বোধ জাগল। সে বিড়বিড় করে বলতে লাগল, ও আল্লাহ গো! ও আল্লাহ গো! ও আল্লাহ গো!

ডাকুক, বেশি করে ডাকুক। এসব বোকা মানুষগুলো ভাবে জগতে ঈশ্বরের একটাই সত্ত্বা। অথচ জগত অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঈশ্বরে বিভক্ত। এই যে রবিউল নামের এই লোকটাকে আমি একটু পরে মারতে যাচ্ছি সেটা নিজের ইচ্ছায় নয়। আমাকে একজন ঈশ্বর আদেশ করেছেন। সেই ঈশ্বরকে আদেশ করেছেন হয়তো আরেকজন, আরেকজনকে আরেকজন, সেই আরেকজনকে অন্য আরেকজন। রবিউল নামের এই সামান্য কাপড় ব্যবসায়ীর ধারণাই

Comments

Popular posts from this blog

ফরেইনারদের ব্যাপারে হোম আফেয়ার্স থেকে আদেশ

ফরেইনারদের ব্যাপারে হোম আফেয়ার্স থেকে আদেশ জারী হয়েছে। দোকানে দোকানে তল্লাশী হবে। কাগজ ছাড়া পেলেই ধরে ফেলবে। কারো দোকান, অফিস আদালতে কাগজ ছাড়া লোক পেলে কোনো অজুহাত শোনা হবেনা, দোকানদারকে বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে গ্রেফতার করা হবে।

ভেলকমে ডাকাতের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

আজ সন্ধ্যা ৮টা বাজে সাউথ আফ্রিকার ফ্রি ষ্টেটের ভেলকমে ডাকাতের গুলিতে  শাকিল নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। জানা যায় শাকিল তখন দোকানের কাউন্টারে অবস্থান করছিলেন। সে সময় একদল ডাকাত হানা দেয় দোকানে। নিহত শাকিল শাকিল কাউন্টার থেকে সব টাকা দিয়ে দেয় ডাকাতদের কিন্তু টাকা দেওয়ার পরেও ডাকাত দল তাকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে শাকিল ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তিনি গত এক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে সাউথ আফ্রিকায় আসে। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী দাগনভূঞা।

প্রধানমন্ত্রীর নামে ফেসবুকে নকল ৭৫২ আইডি বন্ধ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে খোলা ৭৫২টি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টসহ মোট ১৩৩২টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। গত কয়েকদিনে এসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। এনটিএমসির দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গত বছরের ১৯ আগস্ট দৈনিক যোগফলের সম্পাদক আসাদুল্লাহ বাদল একটি পর্যবেক্ষণ মূলক প্রতিবেদন লিখে প্রকাশ করেছিলেন যোগফলে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেক নেতাকর্মীরাও এসব নকল আইডিতে দেওয়া পোস্ট শেয়ার করতেন। এনটিএমসি জানিয়েছে, একটি সংঘবদ্ধ কুচক্রী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন গুজব সৃষ্টি ও অপপ্রচারের মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং ব্যক্তিগত সুবিধা হাসিলের উদ্দেশে দুষ্কৃতিকারীরা বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সংস্থার নামে ভুয়া আইডি ও পেজ খুলে ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল। এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারবর্গের নামে ভুয়া আইডি/ পেজ খুলে মিথ্যা ও মানহানিকর প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেশ ও বিদেশে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্নের অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। ফেসবুকে গুজব ও অপপ্রচার রোধে ন্যাশনাল টেলিকমিউন...